রেমিট্যান্স বাজারে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর এক-চতুর্থাংশের বেশি নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে।সে বাজার হাতছাড়া হতে হতে এখন ১০ শতাংশের ঘরে নেমে এসেছে। সোনালী, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রবাহের অবস্থা একেবারেই নাজুক। তুলনামূলক ভালো অবস্থানে আছে কেবল জনতা ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গত পাঁচ বছরের রেমিট্যান্স প্রবাহের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০২০ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ৫৫৮ কোটি ৮২ লাখ ডলার, যা ছিল মোট রেমিট্যান্সের ২৫ দশমিক ৭০ শতাংশ। এর পর থেকে এ অংশীদারত্ব ক্রমেই কমেছে। ২০২১ সালে ২২ দশমিক শূন্য ৩, ২০২২ সালে ১৭ দশমিক ১১ শতাংশ রেমিট্যান্স দেশে আনে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক। ২০২৩ সালে এ অংশীদারত্ব মাত্র ১২ দশমিক ১৭ শতাংশে নেমে আসে। চলতি বছরের প্রথম চার মাসে রেমিট্যান্সের মাত্র ১০ দশমিক ৪৭ শতাংশ এসেছে রাষ্ট্রায়ত্ত এসব ব্যাংকের মাধ্যমে।
ডলারের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঘোষিত দরে রেমিট্যান্স আনতে গিয়ে এ বিপর্যয় ঘটেছে বলে দাবি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতে, প্রতিযোগিতামূলক মনোভাবের অভাবেই ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্সের বাজারে তাদের অবস্থান হারিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তার বক্তব্য হলো রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কর্মকর্তারা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ঘোষিত দরে ডলার পাওয়ার আশায় বসে ছিলেন। এ কারণে তারা রেমিট্যান্সের বাজার হারিয়েছেন। রেমিট্যান্স আনার ক্ষেত্রে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা ছিল। কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রতিযোগী মনোভাবের ছিটেফোঁটাও ছিল না।
সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে ২০২০ পঞ্জিকাবর্ষে দেশে মোট রেমিট্যান্স এসেছিল ১৪৩ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। অর্থাৎ ওই বছর ব্যাংকটির মাধ্যমে প্রতি মাসে গড়ে রেমিট্যান্স এসেছিল প্রায় ১২ কোটি ডলার। এর পর থেকে ব্যাংকটির মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমতে থাকে। ২০২১ সালে ১ হাজার ৪০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স আসার পর ২০২২ সালে তা ১০৮ কোটিতে নেমে আসে। ২০২৩ সালে তা আরো কমে নেমে আসে মাত্র ৫৮ কোটি ডলারে। আর চলতি ২০২৪ সালের প্রথম চার মাসে (জানুয়ারি-এপ্রিল) মোট ১০ কোটি ৪৭ লাখ ডলার রেমিট্যান্স আনতে পেরেছে ব্যাংকটি। সে অনুযায়ী ব্যাংকটির মাধ্যমে এখন প্রতি মাসে গড়ে রেমিট্যান্স আসছে মাত্র ২ কোটি ৬১ লাখ ডলার। মাসভিত্তিক গড় বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২০ সালের তুলনায় ব্যাংকটিতে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে ৭৮ শতাংশের বেশি।
Recent Comments