বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও সাবেক প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। শনিবার ১৯ শে মার্চ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৯২ বছর।
সাবেক রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
গেল ফেব্রুয়ারিতে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় সাহাবুদ্দীন আহমদকে ভর্তি করা হয় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ)। তিনি বেশ কয়েক বছর ধরে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন। তার পরিবারের সদস্যদের থেকে জানা যায়, সেখানে ভর্তি করানোর পর তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়।
১৯৯০ সালে এরশাদ সরকারের পতনের পর অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান ছিলেন সাবেক এই প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ । ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তাকে রাষ্ট্রপতি করা হয়।
কর্মজীবনে সাহাবুদ্দীন আহমদ প্রথমে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন। ম্যাজিস্ট্রেট, মহকুমা প্রশাসক এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পদেও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬০ সালের জুন মাসে তাকে বদলি করা হয় বিচার বিভাগে। তিনি ঢাকা ও বরিশালে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এবং কুমিল্লা ও চট্টগ্রামে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ঢাকা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার নিযুক্ত হন ১৯৬৭ সালে। ১৯৭২ সালের ২০ শে জানুয়ারি তাকে বাংলাদেশ হাইকোর্টের বিচারক পদে উন্নীত করা হয়।
১৯৮০ সালের ৭ ই ফেব্রুয়ারি সাহাবুদ্দীন আহমদকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারক নিয়োগ করা হয়। বিচারপতি হিসেবে বাংলাদেশ সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীর ওপর তিনি যে রায় দিয়েছিলেন তা দেশের শাসনতান্ত্রিক বিকাশের ক্ষেত্রে এক অনন্য ঘটনা হিসেবে স্বীকৃত।
১৯৮৩ সালের মধ্য ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভরত ছাত্রদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণের ঘটনা তদন্তের জন্য গঠিত তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন এই গুণী বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ। তৎকালীন সরকার তার অবশ্য সেই তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। ১৯৭৮ সালের আগস্ট থেকে ১৯৮২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ রেডক্রস সোসাইটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৯০ সালের ১৪ ই জানুয়ারি তাকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করা হয়। ওই বছরের ৬ ই ডিসেম্বর এরশাদবিরোধী গণ-আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেন তৎকালীন উপরাষ্ট্রপতি মওদুদ আহমদ এবং বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদকে উপরাষ্ট্রপতি নিয়োগ করা হয়। ওই দিনই রাষ্ট্রপতি এরশাদ পদত্যাগ করে উপরাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। এর ফলে তিনি ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে সরকার প্রধানের দায়িত্ব পান। ১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তার নেতৃত্বে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
দেশের সংবিধানের এগারোতম সংশোধনীটি আনা হয় সাহাবুদ্দীন আহমদের চাহিদা অনুসারে। এর ফলে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনের পরও তিনি ১৯৯১ সালের ১০ ই অক্টোবর প্রধান বিচারপতির দায়িত্বে সুপ্রিম কোর্টে ফিরে যান এবং ১৯৯৫ সালের ১ লা ফেব্রুয়ারি প্রধান বিচারপতির পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
১৯৯৬ সালে সাহাবুদ্দীন আহমদ আবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসেন। দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ওই বছর ক্ষমতায় এসে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি হিসেবে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করে। তিনি রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন ১৯৯৬ সালের ৯ ই অক্টোবর। এবং ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর তিনি রাষ্ট্রপতির পদ থেকে অবসর নেন।
সাবেক এই প্রধান বিচারপতির ছেলে-মেয়েদের মধ্যে বড় মেয়ে অধ্যাপক ড. সিতারা পারভিন। পেশাগত জীবনে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। ২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান সিতারা। ওই দুর্ঘটনায় তার দ্বিতীয় মেয়ে শাহানা স্মিথের স্বামী গুরুতর আহত হয়ে পরের বছর মারা যান। বর্তমানে শাহানা যুক্তরাষ্ট্রেই রয়েছেন। ছোট মেয়ে সামিয়া পারভীন একজন স্থপতি। ছেলে শিবলী আহমদ একজন পরিবেশ প্রকৌশলী।
Recent Comments