সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫ জনে । রোববার (৫ই জুন) বিকেলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান জানান, এ তথ্য জানান।
এর আগে চমেক হাসপাতালে কর্মরত জেলা পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক আলাউদ্দীন তালুকদার ৪৩ জনের মৃত্যুর কথা বলেছিলেন।
ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক আনিসুর রহমান জানান, এখনও উদ্ধার অভিযান চলছে। ফায়ার সার্ভিসের ৫টি ইউনিট এখনো কাজ করছে। রোববার (৫ই জুন) সকালেও আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। তিনি বলেন, আগুন নেভাতে সমস্যা হচ্ছে। ডিপোতে বিপুল পরিমাণ ‘হাইড্রোজেন পার অক্সাইড’ দাহ্য রাসায়নিক রয়েছে।
এদিকে, চমেক হাসপাতাল বার্ন ইউনিটে ৫২ জন এবং অর্থোপেডিক বিভাগে ১০ জন ভর্তি রয়েছে। চমেক হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. রফিক উদ্দিন আহমেদ জানান, ৫২ জন ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে। তিনি বলেন, তাদের বেশিরভাগেরই শ্বাসনালী পোড়া। তাদের বাঁচাতে আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি।
মরদেহের পরিচয় শনাক্তে ডিএনএ পরীক্ষা
মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করতে ডিএনএ পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চকবাজার জোনের সহকারী (এসি) কমিশনার শহীদুল ইসলাম। তিনি জানান, পাঁচলাইশ থানা পুলিশ মরদেহের সুরতহাল তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) মর্গে পাঠাচ্ছে। আর সেখানে মরদেহ শনাক্তের জন্য ডিএনএ সংগ্রহ করা হবে বলেও জানান তিনি। যাদের স্বজন নিখোঁজ রয়েছেন তাদের ডিএনএ পরীক্ষা করে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।
ফায়ার সার্ভিসের ৯ কর্মীর মৃত্যু
কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণে ফায়ার সার্ভিসের ৯ কর্মী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় এখনও নিখোঁজ রয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন। এছাড়া আহত ১৫ জন কর্মীকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রোববার (৫ই জুন) বিকেলে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মিডিয়া শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহজাহান সিকদার।
তিনি আরো জানান, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে কনটেইনার ডিপোতে আগুনের ঘটনায় আজ সকালে খবর আসে আমাদের ৫ জন কর্মী মারা গেছেন। দুপুরে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৮ জনে দাঁড়ায়। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী সীতাকুণ্ডের অগ্নিকাণ্ডে কাজ করতে গিয়ে ৯ জন ফায়ার ফাইটার মারা গেছেন।
২৬ শয্যার ইউনিটে ১২০ রোগী
তিল ধারণের ঠাঁই নেই চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের কথা ওয়ার্ডে । জোড়াতালিতে চলছে চিকিৎসা। রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ডাক্তারদের।
চমেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিট সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কাগজে-কলমে মাত্র ২৬ শয্যার এ ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন ১২০ রোগী। এর মধ্যে শুধু ৫২ জন সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণে দগ্ধ রোগী। নতুন যুক্ত হওয়া এসব রোগীর মধ্যে মাত্র ৮ জনের সৌভাগ্য হয়েছে বার্ন ইউনিটের ভেতর চিকিৎসা নেওয়ার। তাদের সবাই মেঝেতে। অন্যদিকে বাকি ৪৪ জন আছেন গাইনী ওয়ার্ডে। যদিও বার্ন ইউনিট থেকে চিকিৎসা ও ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে।
ঢাকায় আনা হয়েছে ১৪ জনকে
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়িতে কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে দগ্ধ আরও ১১ জনকে আজ রোববার ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে দুজন ফায়ার সার্ভিস ও একজন পুলিশ সদস্য। এ নিয়ে রাত আটটা পর্যন্ত ১৪ জনকে এ ইনস্টিটিউটে আনা হলো।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেন সন্ধ্যায় বলেন, ‘এ পর্যন্ত আমরা ১৪ জন রোগী পেয়েছি। তিনি জানান, কিছুক্ষণ আগেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে করে সাতজন রোগীকে নিয়ে আসা হয়। প্রত্যেকের শ্বাসনালি পুড়ে গেছে। এখন পর্যন্ত যাঁরা এখানে এসেছেন, কেউ আশঙ্কামুক্ত নন।’
Recent Comments