May 21, 2024
Latest news

প্রয়োজনে পদত্যাগ করবেন, তবুও ইভিএম নয়  

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার নিয়ে জোর আপত্তি তুলেছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা। একই সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাধার সম্মুখীন হলে পদত্যাগের পরামর্শও দিয়েছেন তারা। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে  সংলাপে এ আহ্বান জানান তারা।

মঙ্গলবার (২২শে মার্চ) নির্বাচন ভবনের সভাকক্ষে বেলা সোয়া ১১টা থেকে তিন ঘণ্টাব্যাপী এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, তিন নির্বাচন কমিশনার, ইসির সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এছাড়া আমন্ত্রিত ৩৯ জন বিশিষ্ট নাগরিকের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ১৯ জন।

 

ইভিএমে ‘না’:

সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিডিপি) ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য  সংলাপে অংশ নিয়ে বলেছেন, ‘ইভিএমের ব্যবহার অত্যন্ত বিতর্কিত বিষয়। এটা থেকে দূরে থাকা ভালো। ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও জটিল করতে দিতে পারে ইভিএম। ঝুঁকি নিয়ে ইভিএম ব্যবহার করা উচিত নয়। ’

 

সংলাপে অংশ নেন সিপিডির ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ইভিএম ব্যবহার করলেই প্রশ্নবিদ্ধ হবেন। তাই এটি ব্যবহার না করে একটি ভালো ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন দেবেন।

 

ইভিএম নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বলেন, লেখক মহিউদ্দিন আহমেদ। এ যন্ত্রে যে ম্যানুপুলেট করা যায় না-তা নিশ্চিত না করে ব্যবহার করা যাবে না, যোগ তরেন তিনি।

 

ইভিএম সব সময় বিতর্কিত- বললেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফরাস উদ্দিন।  তিনি আরো বলেন, এই বিতর্কের সমাধান না করে ব্যবহার করা ঠিক নয়। জোরের সঙ্গে বলব- ইভিএম ব্যবহার না করার জন্য।

 

বিনা টেন্ডারে কীভাবে ইভিএম এলো এমন প্রশ্ন তোলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি আরো বলেন, ইভিএম নিয়ে একজনের এত উৎসাহ কেন, তা নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে। বড় পরিসরে কোনোভাবে ইভিএম ব্যবহার করা যাবে না। চাইলে ৫ থেকে ১০ কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করতে পারে। তবে এটাও না হওয়াই ভালো।

 

ভূমিকা নিতে হবে নিরপেক্ষ, বাধা পেলে পদত্যাগ:

নির্বাচন ব্যবস্থাপনার ওপর আস্থা ফিরিয়ে আনাই চ্যালেঞ্জ, বলেন ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচর্য। নির্বাচনকালীন আইন-বিধির যথাযথ প্রয়োগ করতে পারেন কি-না তা দেখা যাবে। এ সময় তিনি কমিশনকে উদ্যেশ্য করে আরো বলেন, অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন করবেন। সাহসিকতার সঙ্গে কাজ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন। আর প্রতিবন্ধকতা এলে পদত্যাগের সাহস রাখবেন।

 

একই বিষয়ে কথা বলেন, লিডারশিপ স্টাডিজ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. সিনহা এম এ সাঈদ। তিনি বলেন, ইসি এত সংলাপ করার মানে হচ্ছে এখানে সঙ্কট রয়েছে। আপনারা কাজ দিয়ে প্রমাণ করুন, আস্থা অর্জন করুন সবার। নির্বাচনের সময় কতটুকু নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে পারেন তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

 

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, নির্বাচনকালীন সরকারের চরিত্রের ধরণ, কেমন নির্বাচন হবে- প্রয়োজনে এ নিয়ে বিদ্যমান আইন-বিধিতে কী ধরনের পরিবর্তন আনা যায় সে বিষয়েও কাজ করতে হবে। তিনি আরো বলেন, আপনারা চিহ্নিত করুন সমঝোতায় পৌঁছানোর জন্য আইনে কোনো পরিবর্তন করা যায় কিনা।  আর সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ আপনাদেরই নিতে হবে। সরকারের অনুগত না থেকে রাষ্ট্রের জন্য কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, প্রয়োজনে ইস্তফা দেবেন। সব অংশীজন, ভোটার, আমরা আপনাদের পক্ষে আছি।

 

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ভোটাররা নির্বাচনবিমুখ হয়ে পড়েছে। ইসি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। অতীতের ভুলভ্রান্তি স্বীকার করে কাজ এগিয়ে নেয়ার কথাও বলেন এই সাবেক কেবিনেট সচিব। তিনি আরো বলেন, ক্ষমতায় থেকে নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব নয়। গত দু’টি নির্বাচনে দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন করার বিষয়টি সরকার প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।

 

ভোটের-আগে পরে ছয় মাস নির্বাচনকালীন কর্তৃত্ব কমিশনের কাছে থাকা উচিত বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফরাস উদ্দিন। এক্ষেত্রে ভোটের আগে চার মাস, ভোটের পরে দুই মাস; এ ছয় মাস ইসির হাতে ক্ষমতা থাকতে পারে।

 

এ প্রসঙ্গে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, সার্চ কমিটির কারণে বর্তমান কমিশন কিছুটা আস্থা সঙ্কটে পড়েছে। কমিটি সবার নাম প্রকাশ করেনি । এছাড়া নূরুল হুদা কমিশনের সাবেক সচিব এবং আরেক সাবেক সচিবের শ্বশুর আওয়ামী লীগ নেতা হওয়ায় নতুন ইসির দুই সদস্য নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

 

সংলাপের অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রুবায়েত ফেরদৌস, সাবেক সচিব আব্দুল লতিফ মণ্ডল।

এছাড়া ছিলেন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক বেগম শাহীন আনাম, নিজেরা করির কো-অর্ডিনেটর খুশী কবির, বাংলাদেশ ইনডিজিনিয়াস পিপলস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং ও সেন্টার ফর আরবান স্টাডিজের (সিইউএস) চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম।

অংশ নেন, ঢাবি আইন বিভাগের অধ্যাপক হাফিজুর রহমান কার্জন, গভর্নেন্স অ্যান্ড রাইট সেন্টারের প্রেসিডেন্ট জহুরুল আলম, ঢাবি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক শামীম রেজা, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মহিউদ্দীন আহমেদ।

 

দলগুলোর আস্থা অর্জন, গতান্ত্রিক চর্চা বৃদ্ধি, নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি ইত্যাদি নিয়েও মতামত তুলে ধরেন বক্তারা।

 

সবার মতামত নিয়ে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমাদের হারানোর কিছু নেই। যে বয়স হয়ে গেছে তাতে প্রধানমন্ত্রী হওয়ারও সম্ভাবনা নেই। কাজেই আমাদের আসলে পাওয়ার কিছু নেই।

তিনি আরো বলেন, এখান থেকে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে আমরা যদি ইতিবাচক কিছু করতে পারি, যে সাজেশনগুলো দিয়েছেন, ওগুলো বিবেচনায় নিয়ে যদি নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু করা যায়, তাহলে সেটা আমাদের সবার অংশগ্রহণে একটা সফলতা হতে পারে।

 

এ সময় সিইসি বলেন, ১০০ শতাংশ সফলতা হয়তো হবে না, হয়ও না কখনো। কিন্তু কেউ বলেছেন সেটা যদি ৫০ শতাংশ ৬০ শতাংশও গ্রহণযোগ্য হয়, সেটাও বড় সফলতা।

 

বিগত নির্বাচনে বেশ কিছু কারণে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন বলেন সিইসি। তিনি বলেন, কেউ বলছে ভোট দিচ্ছে না। তবে নারায়ণগঞ্জের ইলেকশন খুব সুন্দর হয়েছে। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমের এটা একটা বড়দিক।

 

সিইসি তার বক্তৃতায় আরো বলেন, ইভিএম ব্যবহারে অনেকেই অভ্যস্ত নয়। মেশিনের মাধ্যমে কোনো ডিজিটাল কারচুপি হয় কি না, পৃথিবীর অনেক দেশ ইভিএম বাতিল করে দিয়েছে, কেন করলো সেটা গবেষণা করা উচিত বলেও অনেকে মতামত দিয়েছেন।

 

আর যদি কোনরকম কারচুপি হয়ে থাকে তাহলে রিকাউন্টিং করা যাবে কি-না, এটার কোনো ব্যবস্থা আছে কি-না, তা আমাদেরও বুঝতে হবে। টেকনিক্যাল কমিটির মিটিং করে একটা ধারণা নিতে হবে বলেও জানান তিনি।

 

এর আগে গত ১৩ ই মার্চ শিক্ষাবিদদের সঙ্গে সংলাপ করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ওইসংলাপে  আমন্ত্রিতদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশই সাড়া দেননি। বর্তমান কমিশন গত ২৬ শে ফেব্রুয়ারি নিয়োগ পাওয়ার পর ২৭ শে ফেব্রুয়ারি শপথ গ্রহণ করে। ২৮ শে ফেব্রুয়ারি থেকে তারা দায়িত্ব বুঝে নিয়েই সংলাপের উদ্যোগ নেয়।

 

সংলাপে বসে শিক্ষাবিদরা যে সব সুপারিশ করেছিলেন সে গুলো হলো, দলগুলোকে আস্থায় আনার উদ্যোগ গ্রহণ, ভোটার ও বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে ইভিএম ব্যবহার, দলগুলোর সব স্তরের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্যপদ পূরণে ব্যবস্থা গ্রহণ। এছাড়া ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ, নির্বাচনের সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীগুলোকে ইসির অধীন রাখাও সুপারিশ ছিলো শিক্ষাবিদদের সংলাপে।

 

এরপর গণমাধ্যম, নারী নেত্রী ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসবে সংস্থাটি। কাজী হাবিবুল আউয়ালের বর্তমান কমিশনের অধীনেই অনুষ্ঠিত হবে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। এক্ষেত্রে নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যাবে ২০২৩ সাল থেকেই।

Live Show

Youtube

বিভাগসমূহ

Recent Comments
Scroll to Top

Editor & Publisher : Dr. Kanak Sarwar

© Copyright 2019-2024 Rajnity. All Rights Reserved