September 20, 2024
Latest news

রাত ২টার পর থেকে অসুখে নিষেধাজ্ঞা ঢাকা দক্ষিন সিটির!

সম্প্রতি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন গণবিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে ১লা সেপ্টেম্বর থেকে সিটি এলাকায় যেসব ফার্মেসি রয়েছে তা   রাত ১২টার মধ্যে বন্ধ করতে হবে। হাসপাতালের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যেসব ওষুধের দোকান রয়েছে সেগুলো রাত ২টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে।

সিটি করপোরেশনের এমন সিদ্ধান্তে বিস্মিত, হতবাক সাধারণ মানুষ ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর সমালোচনা আসায় অনেকে ভেবেছিলেন সিটি করপোরেশন ওষুধের দোকানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত বদল করবে। কিন্তু আজ সিটি মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস দৃঢ়ভাবে বলেছেন, করপোরেশনের নেয়া সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে।

রাত ২টার পরে কি কেউ অসুস্থ হবে না? নাকি সিটি করপোরেশন নগরবাসীর অসুখেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। ওষুধের দোকানে বিধিনিষেধ থাকলে হঠাৎ কেউ অসুস্থ হলে বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে।

এখন প্রশ্ন উঠেছে রাত দুইটার পর কী মানুষের অসুখ হবে না। এই সময়ে হাসপাতালে থাকা রোগীদের জরুরি ওষুধের প্রয়োজন হলে মানুষ যাবে কোথায়? খোদ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীলরাও এমন সিদ্ধান্তে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।  সিটি করপোরেশনের এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চলছে নানা সমালোচনা। অনেকেই বলছেন- রাত ২টার পরে কি কেউ অসুস্থ হবে না? নাকি সিটি করপোরেশন নগরবাসীর অসুখেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। ওষুধের দোকানে বিধিনিষেধ থাকলে হঠাৎ কেউ অসুস্থ হলে বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে।

এমনকি হাসপাতালে ভর্তি হলেও মিলবে না ওষুধ। এর দায়ভার কি সিটি করপোরেশন নিবে?  বিশেষজ্ঞরা বলছেন- চিকিৎসা পাওয়া প্রত্যেকটি মানুষের মৌলিক অধিকার। নাগরিকদের সব ধরনের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্রের।

 মানুষের অকল্যাণ হয় এমন কোনো পদক্ষেপ রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান নিতে পারে না। যেকোনো সময় যে কেউ অসুস্থ হতে পারেন। মানুষ কখন কোন রোগে আক্রান্ত হবে সেটাও কেউ জানে না। অসুস্থ হওয়ার আগেও ওষুধ কিনে রাখা সম্ভব না। অসুখ কোনো বার্তা দিয়ে আসে না। দিন কিংবা রাত যে কেউ অসুস্থ হতে পারেন।

জীবন রক্ষাকারী ওষুধের সররবাহ করা দোকান বন্ধ থাকলে বিনা চিকিৎসায় মানুষ মারা যাবে।  ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকার একটি ফার্মেসির কর্মী সিহাব উদ্দিন বলেন, ফার্মেসিতে তেমন একটা বিদ্যুৎ খবচ হয় না। ২টি লাইট ও ১টি ফ্যান চলে। বিল দিয়ে কেউ অতিরিক্ত বিদ্যুৎ খরচ বাড়াতে চায় না। হাসপাতালে রোগী ভর্তি হলে দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই ওষুধ লাগে। রাতে নতুন রোগী হাসপাতালে আসলেও বাইরে থেকে ওষুধ নিতে হয়।

এখন যদি রাত ১২টার মধ্যে ওষুধের দোকান বন্ধ হয়ে যায় তাহলে হঠাৎ অসুস্থ হলে ওষুধ পাবে কোথায়? সিটি করপোরেশনের এমন সিদ্ধান্তে প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। শ্যামলীতে ওষুধ কিনতে আসা সাদাত হাবিব বলেন, রাষ্ট্র সবসময় মানুষের বেঁচে থাকার জন্যই কাজ করে। বিদ্যুৎ বা অর্থ তার সব কিছুই মানুষের জন্য। আমি ওষুধ কখন কিনবো? কারণ আমি অসুস্থ হলেই ওষুধ কিনবো। বাঁচার তাগিদে আমাকে ওষুধ কিনতে হবে। শুধুমাত্র বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য জীবনকে বিপন্ন করা যাবে না।

সাধারণ ভোক্তা হিসেবে আমি মনে করি এটা কোনো সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। কারণ, আমাকে আগে বাঁচতে হবে। কিছু কিছু সেবা আছে সেগুলোকে এর আওতায় রাখতে হবে। তার মধ্যে অন্যতম হলো- জীবন বাঁচার জন্য ওষুধ। সেই ওষুধের জন্য এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়াটা কখনই সঠিক হবে না বলে আমি মনে করি। এখানে কোনো বিকল্প উপায় অবলম্বন করা যেত।

ফার্মাসিস্ট রুবেল হোসেন বলেন, সাধাণত যেসব ফার্মেসি আছে সেগুলো রাত ১২টার মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায়। তবে আমরা হাতেগোনা কয়েকটি ফার্মেসি আছি যারা ২৪ ঘণ্টা সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছি। বিশেষ করে ইমার্জেন্সি যেসব রোগী হাসপাতালে থাকেন তাদের জন্যই। সাধারণত আমরা রাত সাড়ে ১১টার পরে লাইট একদম কমিয়ে দিয়ে ফার্মেসি খোলা রাখি। যেখানে সারাদিন ৫০টি লাইট জ্বলে সেখানে ৩ থেকে ৪টি লাইট জ্বালিয়ে এসি বন্ধ করে শুধুমাত্র ফ্যানটি চালিয়ে আমরা সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছি। এই এরিয়ায় অনেকগুলো হাসপাতাল আছে। যদি ২৪ ঘণ্টা ফার্মেসি না খোলা থাকে তাহলে রোগীরা বিপদে পড়ে যাবে। রোগীর ওষুধ যেকোনো সময় লাগতে পারে। যদি ফার্মেসি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে আমাদের ব্যবসা থেকে রোগীরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

তিনি বলেন, দোকান খোলা রাখাটা অবশ্যই জরুরি বলে মনে করি। এ ছাড়া অতীতে যেকোনো দুর্যোগ, দুর্বিপাকে ওষুধের দোকান সব ধরনের নিষেধাজ্ঞার বাইরেই ছিল। কখনো তা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়নি। 

রাতে ওষুধের দোকান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তকে সিটি করপোরেশনের হঠকারী সিদ্ধান্ত বলে উল্লেখ করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, নাগরিকদের সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব। ঢাকার সবক’টি হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টাই নতুন নতুন রোগী আসে। এসব রোগীর জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম সরবরাহ করে ওষুধের দোকান। ২৪ ঘণ্টা ওষুধের দোকান খোলা থাকলে নগরবাসী যখন তখন ওষুধ কিনতে পারেন। এখন যদি ওষুধের দোকান সিটি করপোরেশন বন্ধ করে দেয় তাহলে ঢাকাবাসীকে বিপাকে পড়তে হবে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা দ্রুত প্রত্যাহার করা উচিত। এমনকি এ জন্য সংশ্লিষ্টদের দুঃখপ্রকাশ করা উচিত। এদিকে ওষুধের  দোকান বন্ধের বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার পরেও সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। আজ করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, আগামী ১লা সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় রাত দুইটার পর সব ধরনের ওষুধের দোকান বন্ধ থাকবে।

 তিনি জানান, ‘ওষুধের দোকানকে আমরা সর্বোচ্চ সময় দিয়েছি। অলিগলি, বিভিন্ন এলাকায় সেগুলোকে আমরা ১২টা পর্যন্ত খোলা রেখেছি। আর হাসপাতালের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ওষুধের দোকানগুলোকে রাত ২টা পর্যন্ত খোলা রেখেছি। আমরা মনে করি, এটা যথেষ্ট। ওষুধ এবং স্বাস্থ্যসেবা খাতকে সর্বোচ্চ সময় দেয়া হয়েছে।’

এদিকে সরকারের জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর-এর উপদেষ্টা ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ওষুধের দোকান বন্ধ নিয়ে সিটি করপোরেশন থেকে যে গণবিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে সেটি প্রত্যাহার করা উচিত। মানুষ কখন অসুস্থ হবে, সেটি কেউ জানেন না। ২টার পরেও মানুষ অসুস্থ হতে পারে। জরুরি ওষুধ লাগতে পারে। এক্ষেত্রে সব সময় ওষুধের দোকান খোলা রাখা উচিত।  প্র

খ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, ওষুধের দোকান বন্ধ নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন যে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছে তা ঠিক হয়নি। রাতে মানুষ অসুস্থ হলে কোথায় যাবে? এটি একটি জরুরি সার্ভিস। মানুষের জীবন-মরণ যেখানে জড়িত রয়েছে, সেখানে বিধিনিষেধ দেয়া উচিত হয়নি। রাতে ওষুধের দোকান খোলা থাকার সংখ্যা খুবই কম। এগুলো ২৪ ঘণ্টাই খোলা রাখা উচিত। সরকার বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য সাময়িক কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে। তার জন্য ওষুধের দোকানের উপর সেই বিধিনিষেধ থাকতে পারে না। এখানে ওষুধ মানুষের জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাই হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিকের আশপাশে ফার্মেসিগুলো বন্ধ করা উচিত হবে না। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে এই গণবিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার করা উচিত। অন্যথায় নগরবাসী বিপাকে পড়বেন। ভোগান্তি হবে। এমনকি প্রাণহানিও ঘটতে পারে।

Youtube

বিভাগসমূহ

Recent Comments
Scroll to Top
September 20, 2024

Editor & Publisher : Dr. Kanak Sarwar

© Copyright 2019-2024 Rajnity. All Rights Reserved