বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর নতুন খড়গ নেমে এসেছে। শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তাদের দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে গণমাধ্যমে রিপোর্ট প্রকাশের জেরে ক্ষুব্দ সরকার। বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশন গণমাধ্যমকে লক্ষ্য করে আক্রমণাত্মক ভাষায় বিবৃতি দিয়েছে। এই রিপোর্ট প্রকাশের জেরেই তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সরকার নির্দেশ দিয়েছে তারা বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর বিষয়ে বিভিন্ন পত্র পত্রিকা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশিত খবরের তথ্যসূত্র জানতে চায়। একইসঙ্গে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলো যাতে পুলিশের খবর প্রকাশের বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করে, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়কে।
বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর বিষয়ে বিভিন্ন পত্র পত্রিকা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশিত খবরের তথ্যসূত্র জানতে চায় সরকার। প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলো যাতে পুলিশের খবর প্রকাশের বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করে, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়কে চিঠি পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
১৩ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (রাজনৈতিক-৬) ইসরাত জাহানের সই করা এ সংক্রান্ত চিঠি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয় এ ধরনের খবর প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াসমূহের অধিকতর সতর্কতা অবলম্বনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’
তথ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে দৈনিক কালের কণ্ঠে প্রকাশিত দুটি নির্দিষ্ট প্রতিবেদনের উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশের পুলিশ টেলিকম সংস্থার উপর গত ০৯ জুন ২০২৪ তারিখ দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকায় “পুলিশ টেলিকমেও বেনজীরের ভূত” এবং “কারখানা চীনে, মালয়েশিয়ায় পরিদর্শনে যান পুলিশ কর্তারা” শিরোনামে দুটি খবর প্রকাশিত হয়।’
‘প্রকাশিত খবরের বিষয়ে পুলিশ টেলিকমের প্রতিবাদ ১২ জুন ২০২৪ তারিখে কালের কণ্ঠে প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো ভিত্তিহীন ও অসত্য তথ্য সংবলিত মর্মে প্রতিবাদলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে। পুলিশ টেলিকমের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে যে, পুলিশ টেলিকম প্রয়োজনীয় বেতার সরঞ্জামাদি আন্তর্জাতিক ও দেশীয় উৎস থেকে সরবরাহকারীদের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অথবা দেশীয় দরপত্র বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সংগ্রহ করে।’
তথ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ‘সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর বিষয়ে বিভিন্ন পত্র পত্রিকা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় অতিমাত্রায় নেতিবাচক খবর প্রকাশিত হতে দেখা যাচ্ছে, যার কোন তথ্যসূত্র উল্লেখ করা হয় না।’
‘তথ্যসূত্র ও সত্যতা বিবর্জিত প্রকাশিত খবরের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ ও সদস্যদের মনোবল নষ্ট হওয়াসহ তাদের মাঝে অসন্তোষ সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।’
‘ফলে খবর প্রকাশের বিষয়ে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াসমূহের তথ্যসূত্রের বস্তুনিষ্ঠতা ও সত্যতার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া সমীচীন প্রতীয়মান হয়। পাশাপাশি প্রকাশিত খবরের সত্যতা যাচাইপূর্বক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য খবরের তথ্যসূত্র জানার আবশ্যকতা রয়েছে।’
গত শুক্রবার ‘বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশন’র পক্ষ থেকেও একই ভাষায় গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি পাঠানো হয়েছে।
এর বিপরীতে শনিবার সাংবাদিকদের সংগঠন বিএফইউজে ও ডিইউজের পক্ষ থেকে পাল্টা বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তথ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এ চিঠিটি সামনে এলো।
পুলিশের সাবেক ও বর্তমান সদস্যদের দুর্নীতি সংক্রান্ত প্রকাশিত বিভিন্ন খবর প্রসঙ্গে পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশনের দেওয়া বিবৃতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)।
শনিবার সংগঠন দুইটি যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, ‘সংবাদ প্রকাশের পর কোনো কোনো নেতা ও সংগঠন যে ভাষায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন, তা স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতি হুমকি।’
তারা আরও বলেছে, ‘সংবাদ কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে নয়, দায়িত্বশীল সাংবাদিকরা প্রাপ্ত তথ্য, দলিল যাচাই-বাছাই করে প্রমাণযোগ্য বিষয়গুলোই প্রকাশ করছেন বলে সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বিশ্বাস করে।’
উল্লেখ্য, পুলিশের সাবেক ও বর্তমান শীর্ষ কর্মকর্তাদের দুর্নীতি নিয়ে সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হচ্ছে। এসব খবর আলোচনাও তৈরি করেছে। এরমধ্যে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও ডিএমপির সাবেক কমিশনার মো. আছাদুজ্জামানের বিপুল সম্পত্তি অর্জনের খবর নিয়ে আলোচনা হচ্ছে বেশি।
Recent Comments