মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং শৃঙ্খলাভঙ্গে সম্পৃক্ত কেউ যেনো শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োগ না পায় সে বিষয়টিকে খুব গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করে জাতিসংঘ।
গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে সম্পৃক্ত ডেথ স্কোয়াড ব়্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (ব়্যাব) এর সদস্যদের শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োগ অব্যাহত থাকা নিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর ক্রমাগত উদ্বেগ প্রকাশ নিয়ে জাতিসংঘ কতটুকু উদ্বিগ্ন জানতে চাইলে বৃহস্পতিবার এক বিশেষ ব্রিফিংয়ে এ মন্তব্য করেন জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বিভাগের আন্ডারসেক্রেটারি জেনারেল জাঁ পিয়ের লাক্রোয়ার। আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস উপলক্ষে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে এই বিশেষ ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়।
লাক্রোয়ার বলেন, “মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের মিশন থেকে বাদ দিতে জাতিসংঘ বিশেষ পদ্ধতি বাস্তবায়ন করে থাকে তবে এটি সময় সাপেক্ষ এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় সমর্থনের প্রয়োজন রয়েছে।”
ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ সরকারের শান্তিরক্ষা মিশনে মানবাধিকার লঙ্ঘনে দায়ী সদস্যদের নিয়োগ নিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর উদ্বেগের প্রসঙ্গ তুলে ধরে জাতিসংঘ স্থায়ী সংবাদদাতা মুশফিকুল ফজল আনসারী জানতে চান, “গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে সম্পৃক্ত ডেথ স্কোয়াড ব়্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (ব়্যাব) এর বর্তমান এবং সাবেক সদস্যরা শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়মিত নিয়োগ পেয়ে যাচ্ছে। আর এটি নিয়ে নিয়োগের ক্ষেত্রে জাতিসংঘ যেনো যাচাই-বাছাই করে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িতদেরকে মিশন থেকে বাদ দেবার জন্য দাবি জানিয়ে আসছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো। এ বিষয়টি নিয়ে আপনারা কতটুকু উদ্বিগ্ন? যেমনটি তুলে ধরা হয়েছে ডি ডব্লিউ, নেত্র নিউজ এবং ডায়েচে সায়েতিংয়ের করা এক যৌথ অনুসন্ধানী রিপোর্টে। ওএইচসিএইচআর’র মানবাধিকার ব্যবস্থার প্রস্তাবিত মানবাধিকার মানদণ্ড মেনে চলার জন্য জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের (ডিপিও) প্রতিষ্ঠিত পদ্ধতি এবং স্ক্রিনিং প্রক্রিয়াগুলি প্রয়োগ করার জন্য জাতিসংঘ কি আজ অবধি বাংলাদেশ সরকারের সাথে কোনো চুক্তি স্বাক্ষর করেছে?”
জবাবে আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, “শান্তিরক্ষা মিশনে সেনা সদস্য এবং পুলিশ পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রতিটি দেশকে মানদণ্ডের শর্ত দেওয়া হয়েছে। এগুলো মেনে চলা জাতিসংঘের প্রত্যেক সদস্য রাষ্ট্রের দায়িত্ব।”
তিনি আরও বলেন, “ডয়চে ভেলে রিপোর্টের ক্ষেত্রে বলতে হয়, শান্তিরক্ষা মিশনে সদস্য পাঠানো সব দেশের কাছে আমাদের আবারও প্রত্যাশা থাকবে তারা যেনো এটা নিশ্চিত করে যে কোনো সদস্য বিরুদ্ধেই যেনো মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং শৃঙ্খলাভঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ না থাকে তা নিশ্চিত করা।”
লাক্রোয়ার বলেন, “আমি এটা বুঝতে পেরেছি (মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োগ নিয়ে) উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। যখনি মনে হয়েছে এসব উদ্বেগ নিয়ে কথা বলা দরকার, তখনি এই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা মিশনে সদস্য প্রেরণকারী বাংলাদেশ এবং অন্যান্য দেশের সঙ্গে কথা বলেছি।”
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি বলেন, “সিনিয়র সেনা কর্মকর্তা কিংবা অন্য সিনিয়র কর্মকর্তার (ইউনিফর্ম ও সাদা পোশাকধারী) ক্ষেত্রে যখনি এরকম উদ্বেগ প্রকাশের প্রয়োজন হয়েছে তখনি আমরা এ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে থাকি। আমরা এই পরিস্থিতি সবসময় সচল রাখি। আমি মনে করি, আমাদের হাতে সঠিক পদ্ধতি রয়েছে। বিশেষ ক্ষেত্রে বিশেষ ধরনের পদ্ধতি প্রয়োগ কিছুটা সময় সাপেক্ষ। এর জন্য সময় এবং সমর্থনের প্রয়োজন হয়। আমরা সবগুলো (মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের মিশনে নিয়োগ) ইস্যুকে খুব গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করে থাকি।”
উল্লেখ্য, ২৯ মে পালিত হয়েছে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস। আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষায় অংশগ্রহণকারী সকল সদস্যের সম্মানে উদযাপিত এ দিবসে বিশ্ব শান্তিরক্ষায় শাহাদাতবরণকারী ও আহত সদস্যগণের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়।
১৯৪৮ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত নানা দেশের ২০ লাখের বেশী শান্তিরক্ষী পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অংশগ্রহণ করেছেন। বর্তমানে বিভিন্ন দেশে জাতিসংঘের ১১ টি মিশনে ৭০,০০০ এর বেশী শান্তিরক্ষী তাদের দায়িত্ব পালন করছে।
Recent Comments