নির্বাচনের আর বছর দেড়েক বাকি। এরইমধ্যে সরগরম হয়ে উঠেছে রাজনীতির মাঠ। গত ১ মাস ধরে সমসাময়িক বিভিন্ন ইস্যুতে সারা দেশে কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। সরকারি দলের পক্ষ থেকেও দেয়া হচ্ছে পাল্টা কর্মসূচি। এসব কারণে বিভিন্ন স্থানে ঘটছে হামলার ঘটনা। ভোলা এবং নারায়ণগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন বিএনপি’র তিন কর্মী। এদিকে চলমান কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি অন্য সমমনা দলগুলো নিয়ে বৃহত্তর ঐক্যের মাধ্যমে যুগপৎ আন্দোলনের দিকে এগোচ্ছে বিএনপি। এর প্রস্তুতিও প্রায় শেষ পর্যায়ে। খুব শিগগিরই দলের পক্ষ থেকে যুগপৎ আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপরেখা ঘোষণা করা হবে। চলতি মাসের শেষ অথবা আগামী মাসের যেকোনো সময় এই রূপরেখা জাতির সামনে তুলে ধরবে বিএনপি।
যুগপৎ আন্দোলনের বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা যুগপৎ আন্দোলনের জন্য সবাইকেই আহ্বান জানিয়েছি। রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি ও সংগঠন যারাই এ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করবে তাদের সঙ্গে নিয়েই আমরা আন্দোলন করবো।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার ব্যাপারে আমরা কাজ করছি এবং দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে আন্দোলনের রূপরেখা চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এদিকে চলতি মাসেই সমমনা দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় সংলাপ শুরু করবে বিএনপি। এর আগে দলগুলোর সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে তারা।
এ ছাড়া প্রথম দফার সংলাপে অন্য দলগুলো যে দাবি জানিয়েছে এসব বিষয়ে বিএনপি’র শীর্ষ নেতার সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন দলটির মহাসচিবসহ নীতিনির্ধারকরা। এসব বিষয়েও সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। এরই মধ্যে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ছাড়ার কথা জানিয়েছেন জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান। তবে বিএনপি’র সঙ্গে আগামীর যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে জাতীয় পার্টি (এরশাদ), ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থের নেতৃত্বাধীন বিজেপি, শরীফ নূরুল আম্বিয়ার নেতৃত্বাধীন জাসদ, জেবেল রহমান গানির নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ন্যাপ ও কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সঙ্গেও প্রকাশ্যে সংলাপ করতে চায় বিএনপি। ইতিমধ্যে এসব দলের নেতাদের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের যুগপৎ আন্দোলনসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা হয়েছে বলে জানা যায়।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না গণমাধ্যমকে বলেন, বিএনপি’র মহাসচিব বলেছেন যুগপৎ আন্দোলনের রূপরেখা ঘোষণা করবেন। তিনি আগে সেটা ঘোষণা করুন। এটা নিয়ে কথা বলা শুরু করুক। আর দ্বিতীয় দফায় সংলাপ করতে চাইলে যেকোনো সময় সংলাপ করতে রাজি আছি।
বিএনপি’র সঙ্গে সংলাপে অংশ নেয়া একটি দলের শীর্ষ নেতা গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা আলাপ আলোচনার মাধ্যমে কিছু বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছি। আবার কিছু কিছু বিষয়ে আরও আলোচনা করতে হবে। আমরা মনে করি, দেশে বিরাজমান সমস্যা সমাধানে সাংবিধানিক ক্ষমতার কাঠামো বদলানো দরকার। এ বিষয়টি নিয়ে আরও আলোচনার প্রয়োজন আছে। আলাপ আলোচনা শেষে আমরা আমাদের কর্মসূচি ঠিক করবো।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। শিগগিরই আন্দোলনের রূপরেখা ঘোষণা করা হবে। গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকারের স্বার্থে সবাইকে এ আন্দোলনে অংশ নিতে হবে। ইস্পাত কঠিন ঐক্য সৃষ্টি করে বর্তমান সরকারের পতন ঘটিয়ে দেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। এজন্য সবাইকে আন্দোলনের মাঠে সক্রিয় থাকতে হবে।
এদিকে বিএনপি’র পর বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করছে নবগঠিত রাজনৈতিক জোট গণতন্ত্র মঞ্চ। আগামী সপ্তাহ থেকেই বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসার পরিকল্পনা করছে তারা।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, বিএনপি’র সঙ্গে আমাদের অনানুষ্ঠানিকভাবে যোগাযোগ আছে। এই মাসের মধ্যে বা আগামী মাসের শুরুতে আমরা মতবিনিময় করবো। আলোচনা করে আমরা কমন রাজনৈতিক ইস্যুগুলো বের করে নিয়ে আসতে চেষ্টা করবো। আগামী মাসের মধ্যেই হয়তো যুগপৎ আন্দোলন শুরু করার সম্ভাবনা রয়েছে।
গণ সংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, যুগপৎ আন্দোলনের বিষয়ে বিএনপি’র সঙ্গে দলীয়ভাবে কথা হয়েছে। তবে জোটগতভাবে এখনো কোনো কথা হয়নি। তবে একটি রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তুলতে গেলে একটি প্রস্তুতির দরকার রয়েছে।
তিনি বলেন, একটি দলের রাজনৈতিক লক্ষ্য থাকবে। তাদের নিজস্ব প্রস্তুতি রয়েছে। জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার জন্যও একটি সময়ের দরকার রয়েছে। বিএনপি বলেছে, তারা তাদের মতো করে বক্তব্য তৈরি করছে। খুব শিগগিরই তারা তা প্রকাশ করে অন্যদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
Recent Comments